আজ ত্রিপুরা রাজ্যের মাতাবাড়িতে পশুবলির একপাশবিক দৃশ্য দেখিয়া আমার রবীঠাকুরের সমাজিক বিষয়ের উপর লেখা ‘অযোগ্য ভক্তি’ প্রবন্ধের কিছু উক্তি মনে পড়িয়াগেল;

পূজা যেন খাজনা দেওয়ার মতো; স্বয়ং রাজার হস্তেই দিই আর তাঁহার তহশিলদারের হস্তেই দিই, একই রাজভাণ্ডারে গিয়া জমা হয়।
দেবতার সহিত দেনা-পাওনার সম্বন্ধ আমাদের মনে এমনই বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছে যে, পূজার দ্বারা ঈশ্বরের যেন একটা বিশেষ উপকার করিলাম এবং তাহার পরিবর্তে একটা প্রত্যুপকার আমার পাওনা রহিল, ইহাই ভুলিতে না পারিয়া আমরা দেবভক্তি সম্বন্ধে এমন দোকানদারির কথা বলিয়া থাকি। পূজাটা দেবতার হস্তগত হওয়াই যখন বিষয়, এবং সেটা ঠিকমতো তাঁহার ঠিকানায় পৌঁছিলেই যখন আমার কিঞ্চিৎ লাভ আছে, তখন যত অল্প ব্যয়ে অল্প চেষ্টায় সেটা চালান করা যায় ধর্ম-ব্যবসায়ে ততই আমার জিত। দরকার কী ঈশ্বরের স্বরূপ ধারণার চেষ্টায়, দরকার কী কঠোর সত্যানুসন্ধানে; সম্মুখে কাষ্ঠ প্রস্তর যাহা উপস্থিত থাকে তাহাকে ঈশ্বর বলিয়া পূজা নিবেদন করিয়া দিলে যাঁহার পূজা তিনি আপনি ব্যগ্র হইয়া আসিয়া হাত বাড়াইয়া লইবেন।
আমাদের পুরাণে ও প্রচলিত কালে যেরূপ বর্ণনা আছে, তাহাতে মনে হয় যেন দেবতারা আপনাদের পূজা গ্রহণের জন্য মৃতদেহের উপর শকুনি-গৃধিনির ন্যায় কাড়াকাড়ি ছেঁড়াছিঁড়ি করিতেছেন। অতএব আমাদের নিকট হইতে ভক্তিগ্রহণের লোলুপতা যে ঈশ্বরেরই, একথা আমাদের শিক্ষিতসম্প্রদায়ের মনেও অলকে নিরাজ করিতেছে।

প্রায় ৮০ বছর আগের ভাবনা আজও কতটা প্রাসঙ্গিক তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। কোন “মা’ তার এক সন্তানের মঙ্গলের জন্য অন্য সন্তানের বলি চাইতে পারেন, তাহা আমার মত অধমের বোধগম্যের বাইরে। তবে যাহারা তা বিশ্বাস করেন তাদের মান এবং হুঁশ আছে বলিয়া আমার দ্বিমত আছে।

মা আমাদের মানুষ করো!

মতামত প্রসঙ্গ: মাতাবাড়িতে ২৮ কোপে বলি হলো মানদ করা পাঠা, অনাচার বললেন পুরহিত।


ORM008066CW03523


full-width