![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgv6uXbZSSaFoOlUWH5VwCyOUeHOfjZeKQNT_XPAcR2NCMjhwW2_YJ0oUDHVdvoH15q4JCs2zKvutnIeZM5VV3oToO2pJG2Br29djHiLjq-1V5UH3RV3z3YEbR1lxZH2B0-QDGZ-G_N4HM6WwNZjvTq1M8TOTmlvIOgnWe7wbZN_cB3ZI5bQqj7jo6n9w/s16000/THE%20LEGEND%20OF%20KHANA.jpg)
খনা এক কিংবদন্তীর নাম। তাকে নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানারকম কাহিনী। তার আবির্ভাব সম্পর্কে সঠিকভাবে তেমন তথ্য জানা যায় না তবে ধারণা করা হয় ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব ঘটেছিল। কিংবদন্তি অনুযায়ী তাঁর বসবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের দেউলি গ্রামে।
শোনা যায় তাঁর পিতার নাম ছিল অনাচার্য । সে সময় চন্দ্রকেতু রাজার আশ্রম চন্দ্রপুরে বাস করতেন খনা। এক শুভক্ষনে জন্ম হওয়ায় তার নাম দেওয়া হয় ক্ষনা বা খনা।কথিত আছে তার আসল নাম লীলাবতী আর তার ভবিষ্যতবাণীগুলোই খনার বচন নামে বহুল পরিচিত।কারণ যে গণিত শাস্ত্রের বই পাওয়া যায়, তাতে খনার ছাপ স্পষ্ট। ছোট ছোট সূত্রে তিনি গণিতের মূল কথা গুলো বলেছিলেন।
“অঙ্কস্য বামা গতি” অর্থাৎ অঙ্ক দক্ষিণ থেকে বাম দিকেগণণা করিতে হইবে। তার পিতার নাম ছিন অটনাচার্য। খনার একটি বচনে এই পরিচয় পাওয়া যায়। “ আমি অটনাচার্যের বেটি, গণতে গাঁথতে কারে বা আঁটি” আবার আরও এক কিংবদন্তি বলে খনা ছিলেন সিংহলরাজের কন্যা। তখন বিক্রমপুরের রাজা বিক্রমাদিত্যের সভার প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ বরাহ(উপমহাদেশের প্রাচীন রাজ্য অবন্তী তথা উজ্জয়নের রাজা হর্ষ-বিক্রমাদিত্যের রাজপ্রাসাদে প্রধান জ্যোতির্বিদ ছিলেন বিখ্যাত পন্ডিত বরাহ) তার শিশুপুত্র মিহিরের জন্ম লাভের পর গণনা করে দেখেন যে তাঁর আয়ু মাত্র এক বছর। তাই শিশুটিকেকে তিনি একটি পাত্রে করে সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে পৌঁছায় এবং সিংহল রাজ তাকে লালন পালন করেন। বড় হবার পর সিংহল রাজা যুবক মিহিরকে খনার সাথে বিয়ে দেন। সেখানে ধীরে ধীরে মিহির ও খনা জ্যোতিষ শাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জন করতে থাকেন।
আবার আরেক কাহিনীতে শোনা যায় নদীতে ভাসতে ভাসতে শিশু পুত্রটি চলে যায় অনেক দূরের এক রাজ্যে, নদী থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে এক অনার্য জংলি সম্প্রদায়। বড় হতে থাকে তাদের মধ্যে। ষোল বছর বয়সে ক্ষুরধার বুদ্ধির এক মেয়ের প্রেমে পড়ে ও বিয়ে করে তাকে। মেয়েটি তার জ্যোতির্জ্ঞান প্রয়োগে জানতে পারে তার স্বামী মিহির উজ্জয়নের বিখ্যাত পন্ডিত বরাহমিহিরের পুত্র। একদিন দুজন মিলে রওয়ানা দেয় উজ্জয়নের পথে। পুত্র-পুত্রবধুর পরিচয় পেয়ে রাজপ্রাসাদে তাদের গ্রহণ করতে চাইলেন না বরাহ। কারণ তিনি তার গণনায় অনেক আগেই জানতে পেরেছিলেন যে, এক বছর বয়সেই তাঁর পুত্র মিহিরের মৃত্যু ঘটবে। খনা তখন তাঁর একটি বচন দিয়ে শ্বশুরের ভুল গণনা প্রতিপন্ন করেন, কিসের তিথি কিসের বার, জন্ম নক্ষত্র কর সার কি করো শ্বশুর মতিহীন, পলকে আয়ু বারো দিন। তার মানে এ গণনায় মিহিরের আয়ু ১০০ বছর। পণ্ডিত বরাহ তখন উৎফুল্ল চিত্তে খনা ও মিহিরকে গ্রহণ করেন। কৃষিকাজে খনার ছিল অগাধ জ্ঞান আর গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান বিচার করে আবহাওয়ার চমৎকার পূর্বাভাস দিতে পারত সে। উজ্জয়নের কৃষকরা ব্যাপক উপকার লাভ করে তার কাছ থেকে, আর তা দেখে রাজা বিক্রমাদিত্য মেয়েটিকে তার রাজ্যের দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। মেয়েটির জ্ঞানে সারা রাজ্য রাজপ্রাসাদ মুগ্ধ হয়ে পড়ে, পন্ডিত বরাহের মূল্য কমে যায়। একদিন বরাহ জনসমক্ষে এক বিতর্কে পুত্রবধুর হাতে পরাস্ত হন। ঈর্ষাপরায়ণ বরাহ চতুর এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পুত্রকে আদেশ দেন মেয়েটির জিহ্বা কেটে ফেলতে যাতে চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায় তার কন্ঠ। পুত্র সে আদেশ পালন করেন।
তিনি সর্বযুগের সর্বকালের রহস্যের আঁধার, নিঁখুত ভবিষ্যৎ বক্তা, ছড়াকার খনা বা ক্ষনা। তার আবহাওয়া , জ্যোতিষ ও ভু-তত্ব ভেদে শস্যের ক্ষয়ক্ষতি ও ফলন সম্পর্কে বলা বচন গুলো সবই অদ্ভুত রকমের নির্ভুল এক বিস্ময়। এমন একজন বুদ্ধিমতী রমনীর এমন মর্মান্তিক অকাল প্রয়ান কিছুতেই মেনে নেবার মত নয় ও রিতীমত দুঃখজনক ঘটনা। তারপরও তার মৃত্যু কেড়ে নিতে পারেনি তার যথার্থ সন্মানকে। গ্রাম বাংলা ও শহুরে পরিবেশে প্রায়ই আমরা খনা ও তরা বচনকে আজও স্মরণ করি।
খনা-মিহিরের মূড়া (Mound of Khona-Mihir)
কলকাতা শহরের ৪০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে বারাসাত নগরীর কাছে বীরচম্পা নামক স্থানে দেখা যায় প্রাচীন এক ভগ্নাবশেষ! ধারণা করা হয়, এখানেই ছিল রাজা চন্দ্রকেতুর সাম্রাজ্য। কৃষিকাজ বা অন্যান্য খননকাজে মাটির নীচ থেকে প্রায়ই বেরিয়ে আসে নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন মুদ্রা, পুঁতি, প্রস্তর ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য। এখানেই, মহাসড়কের উত্তর পাশে শায়িত সমাধিফলকের মত শুয়ে রয়েছে এক ইঁটের স্থাপনা। বহুভুজাকৃতির উঁচু এই স্থাপনাটি কৌতূহল জাগানোর মত উত্তর-দক্ষিণে সুবিন্যস্ত, পাশে আরো কিছু স্থাপনা। এটিই খনা-মিহিরের মূড়া (Mound of Khona-Mihir) নামে পরিচিত।
খনা সম্পর্কে যত রকম গল্পই প্রচলিত থাকুক না কেনো সব গল্পের শেষেই তার করুন মৃত্যুর কারন তার অসাধারণ প্রজ্ঞা। যার কারণে ইর্ষার শিকার হতে হয়েছিলো এই অসাধারণ মানুষটিকে। খনার বচন মূলত কৃষিতত্ত্বভিত্তিক ছড়া। আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। তবে এ নিয়ে মতভেদ আছে। অজস্র খনার বচন যুগ যুগান্তর ধরে গ্রাম বাংলার জন জীবনের সাথে মিশে আছে। এই রচনা গুলো চার ভাগে বিভক্ত।
• কৃষিকাজের প্রথা ও কুসংস্কার।
• কৃষিকাজ ফলিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান।
• আবহাওয়া জ্ঞান।
• শস্যের যত্ন সম্পর্কিত উপদেশ।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgRt_j1dAC0ZJSH9qCfdk6U0yHy3ZT66HhOBUysWHx2nlkP8T3mIA_ehBV8T9ZTVK8iNSYhbtPXxJd3o9XFzxm8-tyR9TgHzFxzzGv1EFKmkR2bagy6f4I_KU6OyZERlpfNoiqecTdRnh2OGMcJpv3Og7Lsvel52ZaFsSA8DTTJlDKSKpMgNRkj1Skwqw/w200-h46/Digital%20Signature%20Blog.png)
CR007862CV02275
Source: Banglapedia /Eibela Video: TEDx Talks
0 মন্তব্যসমূহ