মতামত: ২২শে ডিসেম্বর,
২০২৫: আরাবল্লি পাহাড় ঘিরে সাম্প্রতিক প্রতিবাদ শুধু ভূগোল বা আইনি ব্যাখ্যা
বা সংজ্ঞার বিষয় নয়। এটি আসলে পরিবেশের টিকে থাকা বনাম প্রশাসনিক সুবিধার মধ্যে একটি
বড় লড়াই। বিশ্বের প্রাচীনতম পর্বতমালাগুলোর একটি আরাবল্লিকে আজ কাগজে-কলমে সংকীর্ণ
প্রযুক্তিগত সংজ্ঞার মাধ্যমে ছোট করে দেখানো হচ্ছে। নাগরিক, পরিবেশবিদ এবং স্থানীয়
মানুষ প্রতিবাদে নেমেছেন,
কারণ তারা একটি সহজ সত্য বোঝেন, “একবার ধ্বংস
হলে প্রকৃতি আর ফিরে আসে না”।
এই লেখায় আরাবল্লি পাহাড়ের ইতিহাস, গুরুত্ব, সরকারের অবস্থান, সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং ক্রমবর্ধমান জনরোষ, সবকিছুর বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এই লেখায় আরাবল্লি পাহাড়ের ইতিহাস, গুরুত্ব, সরকারের অবস্থান, সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং ক্রমবর্ধমান জনরোষ, সবকিছুর বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
আরাবল্লি পাহাড়ের ইতিহাস: ভারতের প্রাচীনতম ঢাল!
আরাবল্লি পাহাড়ের বয়স ২৫০ কোটি বছরেরও বেশি, যা একে পৃথিবীর প্রাচীনতম পর্বতমালার মধ্যে একটি। প্রাক-ক্যাম্ব্রিয়ান (Precambrian) যুগে গঠিত এই পাহাড়গুলি হিমালয়ের বহু আগেই অস্তিত্বে ছিল। সময়ের সঙ্গে ক্ষয়ের ফলে উচ্চতা কমেছে, কিন্তু গুরুত্ব কমেনি।
গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা ও দিল্লি জুড়ে বিস্তৃত আরাবল্লি ভারতের জলবায়ু ও ভূগোল গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছে। সিন্ধু সভ্যতার সময়ে এখানে প্রাথমিক মানব বসতি ও খননের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন বাণিজ্যপথ এই পাহাড়ের মধ্য দিয়েই যাতায়াত করত।
মধ্যযুগে আরাবল্লি ছিল প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা প্রাচীর। রাজপুত রাজারা কুম্ভলগড় ও রণথম্ভোর এর মতো দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন এই পর্বতমালায়। নীরবে এই পাহাড় ভারতের প্রাকৃতিক ও মানব ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে।
আজ এগুলোকে শুধু “নিচু পাহাড়” বলে অবহেলা করা শুধু অজ্ঞতা নয়, এটি বিপজ্জনক।
পরিবেশগত ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব: আজ কেন আরাবল্লি অপরিহার্য!
আরাবল্লি পাহাড় উত্তর ও পশ্চিম ভারতের জন্য একটি প্রাকৃতিক জীবন ব্যাবস্থার অভিন্ন অঙ্গ।
এগুলো:
* থর মরুভূমির বিস্তার রোধ করে
* ভূগর্ভস্থ জল পুনর্ভরণে সহায়তা করে
* সাহিবি ও লুনি নদীর মতো জলধারাকে টিকিয়ে রাখে
* তাপপ্রবাহ, ধূলিঝড় ও বায়ুদূষণ কমায়
* দিল্লি-এনসিআরের জন্য একমাত্র পরিশুদ্ধ বায়ু প্রবাহের উৎস হিসেবে কাজ করে
ঐতিহাসিকভাবে আদিবাসী ও গ্রামীণ সমাজ জল, চারণভূমি ও জীবিকার জন্য আরাবল্লির ওপর নির্ভরশীল। আজ জলবায়ু পরিবর্তন, জলসংকট, নগর তাপ ও দূষণ এর কারণে এই পাহাড়ের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।আরাবল্লি ধ্বংস মানে লক্ষ লক্ষ মানুষকে জলাভাব ও জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া।
আরাবল্লি পাহাড় উত্তর ও পশ্চিম ভারতের জন্য একটি প্রাকৃতিক জীবন ব্যাবস্থার অভিন্ন অঙ্গ।
এগুলো:
* থর মরুভূমির বিস্তার রোধ করে
* ভূগর্ভস্থ জল পুনর্ভরণে সহায়তা করে
* সাহিবি ও লুনি নদীর মতো জলধারাকে টিকিয়ে রাখে
* তাপপ্রবাহ, ধূলিঝড় ও বায়ুদূষণ কমায়
* দিল্লি-এনসিআরের জন্য একমাত্র পরিশুদ্ধ বায়ু প্রবাহের উৎস হিসেবে কাজ করে
ঐতিহাসিকভাবে আদিবাসী ও গ্রামীণ সমাজ জল, চারণভূমি ও জীবিকার জন্য আরাবল্লির ওপর নির্ভরশীল। আজ জলবায়ু পরিবর্তন, জলসংকট, নগর তাপ ও দূষণ এর কারণে এই পাহাড়ের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।আরাবল্লি ধ্বংস মানে লক্ষ লক্ষ মানুষকে জলাভাব ও জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া।
ভারতের সরকারের অবস্থান: স্পষ্টতা না সুবিধা?
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক পরিমাপযোগ্য ভৌত মানদণ্ড, যেমন ন্যূনতম উচ্চতা ও পাহাড়ের ধারাবাহিকতা ভিত্তিক সংজ্ঞাকে সমর্থন করে। এই সংজ্ঞা সুপ্রিম কোর্টে উপস্থাপিত হয় এবং গৃহীত হয়।
সরকারি দাবি অনুযায়ী:
* এটি আইনি স্পষ্টতা আনার উদ্যোগ
* খনন এখনও নিয়ন্ত্রিত
* পরিবেশ আইন এখনও কার্যকর
কিন্তু সমালোচকেরা তীব্র আপত্তি তুলেছেন।
প্রকৃতি উচ্চতার সীমা মানে না। আরাবল্লির বহু পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিচু পাহাড়, পাথুরে রিজ ও বনভূমি এখন সংজ্ঞার বাইরে পড়ছে। খনন ও রিয়েল এস্টেট কীভাবে এতে লাভবান হবে, সে বিষয়ে সরকারের নীরবতা জনমনে অবিশ্বাস বাড়িয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবেশগত প্রজ্ঞার চেয়ে প্রশাসনিক সুবিধাকে অগ্রাধিকার দেয়।
সেন্ট্রাল এমপাওয়ার্ড কমিটি (CEC): সীমিত দৃষ্টিভঙ্গি
সেন্ট্রাল এমপাওয়ার্ড কমিটি খনন নিয়ন্ত্রণে সুবিধার জন্য আরাবল্লি পাহাড়ের স্পষ্ট সংজ্ঞা দেওয়ার সুপারিশ করে। তারা জানায়, নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় অপব্যবহার ও দুর্বল প্রয়োগ ঘটছে। টেকসই খনন, পরিবেশ ছাড়পত্র ও নজরদারির কথা বলা হয়। তবে সুপারিশগুলো খনন ব্যবস্থাপনা কেই বেশি গুরুত্ব দেয়, পরিবেশ সুরক্ষাকে নয়। কঠোর সংরক্ষণ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ মানে ধ্বংসকে শুধু বিলম্বিত করা।
কেন একক সংজ্ঞা প্রয়োজনীয় বলে ধরা হয়েছিল?
প্রশাসনিকভাবে নির্দিষ্ট সংজ্ঞা সরকার ও আদালতকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, কোথায় খনন হবে বা হবে না। ভিন্ন ব্যাখ্যা বিভ্রান্তি ও আইনি ফাঁকফোকর তৈরি করেছিল। কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষা প্রযুক্তিগত সুব্যবস্থায় সীমাবদ্ধ হতে পারে না। প্রকৃতির সুরক্ষাকে দিয়ে শাসক বা মাপজোকের ফিতেতে নির্দিষ্টতা আনা চলবে না।
সুপ্রিম কোর্টের রায়: আইনি স্পষ্টতা, পরিবেশগত ঝুঁকি!
সুপ্রিম কোর্ট আইনি বিচারে সামঞ্জস্য আনতে আরাবল্লি পাহাড়ের নতুন প্রযুক্তিগত সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছে। আদালত বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন ও উপস্থাপনার ওপর নির্ভর করেছেন। প্রকৃতির সুরক্ষা দুর্বল করা উদ্দেশ্য না হলেও, প্রভাব ঠিক সেটাই হতে পারে!
পরিবেশ নির্দিষ্ট মাপে চলে না। নির্দিষ্ট উচ্চতার নিচে থাকা পাহাড়ও জল ধরে রাখতে পারে, আবহাওয়া ঠান্ডা রাখতে পারে, জীববৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। এই রায় দেখিয়ে দেয়, পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা কোথায়। আদালত কাগজে সিদ্ধান্ত নেয়; প্রকৃতি বাঁচে পারস্পরিক সংযুক্ত ব্যবস্থায়। বিচারব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা জরুরি, কিন্তু সমালোচনামূলক মূল্যায়নও সমানভাবে প্রয়োজনীয়।
সুপ্রিম কোর্ট কি খনন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছেন?
নতুন সংজ্ঞা কেন দেশজুড়ে প্রতিবাদ ডেকে এনেছে?
মানুষের বিশ্বাসে, নতুন সংজ্ঞা:
* আরাবল্লির বড় অংশের সুরক্ষা আওতার বাইরে চলে যায়,
* জল নিরাপত্তা ও জলবায়ু স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে
স্থানীয় মানুষ জীবিকা হারানোর ভয়ে আছেন। পরিবেশবিদেরা মরুকরণ ও তাপ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নাগরিকদের ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান। তাই এই প্রতিবাদ শুধু আবেগের নয়, এটি টিকে থাকার লড়াই। “সেভ আরাবল্লি” কেবল মাত্র স্লোগান নয়; এটি একটি সতর্কবার্তা।
কেন আরাবল্লি পর্বতমালা রক্ষা করা জরুরি?
আরাবল্লি আমাদের রক্ষা করে:
* জলব্যবস্থার পতন থেকে,
* উচ্চমাত্রার জলবায়ু থেকে,
* মরুভূমির বিস্তার থেকে,
* পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে
একবার ধ্বংস হলে এগুলো আর গড়ে তোলা যায় না। কোটি কোটি বছরে তৈরি প্রাকৃতিক ব্যবস্থার বিকল্প কোনো কৃত্রিম প্রকল্প হতে পারে না। আরাবল্লি রক্ষা মানে উন্নয়নের বিরোধিতা নয়, এটি দায়িত্বশীল উন্নয়ন।
এর পরিবর্তে সরকারের কী করা উচিত ছিল?
* বিস্তৃত পরিবেশগত সংজ্ঞা গ্রহণ করা
* নিচু পাহাড়, বনাঞ্চল ও জলাধার অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করা
* জনগনের পরামর্শ নেওয়া
* অবৈধ খননের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা জোরদার করা
* সুবিধার চেয়ে সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেওয়া
প্রশাসনিক স্বচ্ছতা জনরোষ কমাতে পারত। প্রজ্ঞা সংঘাত ঠেকাতে পারত।
প্রকৃতি ছাড়া উন্নয়ন মানে আত্মবিনাশ!
আরাবল্লি বিতর্ক প্রমাণ করে, সংজ্ঞা ভাগ্য নির্ধারণ করে। যা আইনি ভাবে স্পষ্ট করে, তা পরিবেশগত ভাবে নিষ্ঠুর হতে পারে।
এই প্রতিবাদ উন্নয়নের বিরুদ্ধে নয়, অন্ধতার বিরুদ্ধে। কোটি কোটি বছর ধরে আরাবল্লি ভারতকে রক্ষা করেছে। এখন ভারতের দায়িত্ব আরাবল্লিকে রক্ষা করা।
আরাবল্লি বিতর্ক প্রমাণ করে, সংজ্ঞা ভাগ্য নির্ধারণ করে। যা আইনি ভাবে স্পষ্ট করে, তা পরিবেশগত ভাবে নিষ্ঠুর হতে পারে।
এই প্রতিবাদ উন্নয়নের বিরুদ্ধে নয়, অন্ধতার বিরুদ্ধে। কোটি কোটি বছর ধরে আরাবল্লি ভারতকে রক্ষা করেছে। এখন ভারতের দায়িত্ব আরাবল্লিকে রক্ষা করা।
আমরা যদি এগুলো হারাই,
আমরা জল, জলবায়ুর
ভারসাম্য ও সাধারণ বুদ্ধি, সবই হারাব।
আরাবল্লিকে বাঁচানো কোনো বিকল্প নয়। এটি আমাদের একমাত্র দায়িত্ব।
◉ ORMD09073YD06660

