বুক রিভিউ: মিডনাইটস ফিউরিজ বাই নিসিদ হাজারি

GK Dutta
0

Midnight’s Furies: The Deadly Legacy of India’s Partition বইটি লিখেছেন নিসিদ হাজারি, যিনি একজন ভারতীয়-মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক। বইটি ২০১৫ সালে Houghton Mifflin Harcourt প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়। এর পৃষ্ঠাসংখ্যা প্রায় ৩২৮। এই বইটি সমকালীন ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছে, যেখানে ১৯৪৭ সালের ভারতের বিভাজনের প্রকৃত তথ্যভিত্তিক গল্প তুলে ধরা হয়েছে।

এই বইটি কোনো ভাবলেশহীন ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ের মতো নয়। বরং এটি গল্পের আকারে লেখা হয়েছে, যেখানে আছে নাটকীয়তা ও আবেগ। Midnight’s Furies-এর মূল কাহিনি হলো ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম। এখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে নেহরু ও জিন্নাহ সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, কিভাবে ব্রিটিশরা তড়িঘড়ি করে ভারত ছেড়ে চলে যায়, আর কিভাবে এর ফলে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ নিহত হয় এবং কোটি কোটি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারায়। এই বইটিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে বিভাজনের কারনেই ভারত-পাকিস্তানের শত্রুতার বীজ বপন হয়েছে যা পরবর্তী সময়ে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি করে।

হাজারি বইটিকে বিভিন্ন অধ্যায়ে ভাগ করেছেন, যা নিয়ে যায় ব্রিটিশ শাসনের শেষ সময় থেকে বিভাজনের বেদনাদায়ক দিনগুলো এবং তারপরে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ সহিংসতার দিকে। সহজ বোঝার জন্য, আমি অধ্যায় গুলোকে চার ভাগে ভাগ করেছি, যা এই বইয়ের মূল বিষয়গুলোকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

অধ্যায় ১-৩: এই অধ্যায়গুলো ব্রিটিশ ভারতের শেষ দিনগুলো নিয়ে। এখানে মূল নেতাদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই পটেল এবং মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ। আমরা দেখি, ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের ভিন্ন ভিন্ন ধারণা। গান্ধী চাইতেন হিন্দু-মুসলমান ঐক্য, নেহরু চাইতেন আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ ভারত, আর জিন্নাহ চাইতেন মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র।

অধ্যায় ৪-৬: এখানে রাজনৈতিক আলোচনার ভেঙে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। জিন্নাহ ও নেহরু একে অপরের উপর ভরসা করতে পারতেন না। ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন কোনো সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই স্বাধীনতার প্রক্রিয়াকে দ্রুত শেষ করেন। এই তাড়াহুড়ো সিদ্ধান্ত সীমান্ত কোথায় হবে তা নিয়ে বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি তৈরি করে।

অধ্যায় ৭-৯: এখানে পাঞ্জাব ও বাংলায় ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ হিন্দু, মুসলমান ও শিখ একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বইটিতে মর্মান্তিক কাহিনি আছে, লাশভর্তি ট্রেন, পুড়ে যাওয়া গ্রাম, নারী ও শিশুদের উপর আক্রমণ। হাজারি জানান, প্রায় ১৪ থেকে ১৫ মিলিয়ন মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নতুন সীমান্তের অন্য প্রান্তে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

অধ্যায় ১০-১২: এই অধ্যায়গুলোতে ভারত-পাকিস্তানের শত্রুতার সূচনা দেখানো হয়েছে। কাশ্মীর সমস্যা তখনই শুরু হয়, এবং স্বাধীনতার প্রথম বছর থেকেই দুই দেশ শত্রুতে পরিণত হয়। হাজারি দেখিয়েছেন, বিভাজন শুধু রক্তপাতই ঘটায়নি, বরং এমন এক স্থায়ী বৈরিতা তৈরি করেছে, যা আজও দক্ষিণ এশিয়াকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

সব অধ্যায় জুড়ে হাজারি রাজনৈতিক ইতিহাসের সাথে মানবিক গল্প গুলিও তুলে ধরেছেন। তিনি শুধু নেতাদের কথা বলেননি, সাধারণ মানুষের কষ্টের কথাও বলেছেন। তাঁর লেখার ভঙ্গি দ্রুতগামী ও আকর্ষণীয়, প্রায় উপন্যাসের মতো।

আজকের হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির ইতিহাস শিক্ষার যুগে এই বই প্রতিটি ভারতীয় ও পাকিস্তানি পাঠকের জন্য, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায়ই স্কুলে বা রাজনীতিতে বিভাজনের কথা শুনি, কিন্তু এর পেছনের মানবিক যন্ত্রণাকে সবসময় বুঝতে পারি না। নিসিদ হাজারি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, তেমনি মানবিক কষ্টও গুলিও এই বইতে স্থান পেয়েছে।

এই বই পড়ে আমরা উপলব্ধি করতে পারব শান্তি, সহনশীলতা ও ঐক্যের গুরুত্ব। এটি শেখায় কিভাবে ঘৃণা ও বিভেদ পুরো সমাজকে ধ্বংস করতে পারে। একইসঙ্গে এটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কেন আজও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এত সমস্যা রয়েছে।

এই বইটি অবশ্যই পড়া উচিত, কারণ এটি সহজ, শক্তিশালী ও আবেগপূর্ণ। এটি শুধু ইতিহাস নয়; এটি ভবিষ্যতের জন্য এক সতর্কবার্তা।
ORMD08965YD04274

full-width

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!