নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন, নিজের সাথে সময় কাটাতে শিখুন! যতটা সম্ভব নিজের ব্যাক্তিগত জীবনকে ব্যাক্তিগত রাখতে চেষ্টা করুণ। বই পড়ুন, গান শুনুন এবং নিজের সাথে নিজে মতবিনিময় করুন। দেখবেন কোন সমস্যাই আপনাকে ভাঙ্গতে পারছেনা। যেকোন ধরনের মানসিক অবসাদ সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আত্মবিশ্বাস বাড়বে। মনে রাখবেন জীবনে খুশি থাকাটা সব থেকে বেশি ইম্পরট্যান্ট!
দুটি ব্যাঙ একদিন একসাথে পথ চলছিল। পথ চলতে চলতে তারা দুজনেই একসাথে একটি তিনহাত গভীর গর্তে পড়ে গেল। পড়ে গিয়েই তো বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার জুড়ে দিল, আর লাফিয়ে লাফিয়ে সেই গর্ত থেকে ওঠার চেষ্টা করতে লাগল।
তো, ব্যাঙ দুটোর চিৎকার শুনে আশে পাশে থাকা আরও বেশ কয়েকটি ব্যাঙ এসে গর্তের চারিদিকে ভিড় জমালো। দুই ব্যাঙের অবস্থা দেখে তাদের খুব দু:খ হল। কিন্তু কি আর করা! তারা নামলে তো ওদের বাঁচাতে পারবেই না, বরং নিজেদেরও মরতে হবে। ওদিকে ব্যাঙদের বন্ধু, বাঁদরও নতুন বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে গেছে – মাসখানেকের আগে মনে হয় ফিরবে না। কাজেই তার কাছে সাহায্যের আশা করা বৃথা।
ওদিকে গর্তে পড়া দুই ব্যাঙ ক্রমাগত লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কিন্তু পিচ্ছিল মাটি বেয়ে উঠতে পারছে না। দুই ব্যাঙের একটির নাম পু, আর অন্যটি ফু। পু আর ফু এর কষ্ট দেখে অন্য ব্যাঙেরা চিৎকার করে বলতে লাগল যে “ভাই, তোরা তো এমনিতেও মরবি ওমনিতেও মরবি, শুধু শুধু কষ্ট কেন করছিস?” শেষ সময়টা আরামে কাটা। এরকম কয়েকবার বলার পর পু গর্তের মধ্যে চুপচাপ বসেই থাকল। কিন্তু ফু আরও জোরে লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে লাগল। ওকে যতই মানা করা হয় যে চেষ্টা করিস না, ও ততই লাফানোর জোর বাড়িয়ে দেয়। অন্য ব্যাঙেরা এরপর চিৎকার করে ওকে ‘বোকা’, ‘বলদ’ – ইত্যাদি নানান কটু কথা বলে চিৎকার করতে লাগল। পু এইসব শুনে বসে বসে কাঁদতে লাগল, আর বোকা ফু-টা আরও যেন উৎসাহ পেয়ে লাফাতে লাগলো। কেউ বুঝতে পারছে না, এই ব্যাঙের সমস্যা কি!
পু অন্য ব্যাঙদের কথা শুনে বসে বসে কাঁদছিল, আর ফু ক্রমাগত লাফিয়ে লাফিয়ে উঠতে চেষ্টা করছিল। অন্য ব্যাঙেরা যতই তাকে বলে যে শুধু শুধু চেষ্টা করিসনা, মরার সময়টা শান্তিতে মর, ফু ততই আরও উৎসাহিত হয়ে লাফাতে শুরু করে। লাফাতে লাফাতে গর্তের মাঝ বরাবর ঢালু জায়গায় ফু এর আঘাতের ফলে একটি ছোট গর্তের সৃষ্টি হল। কয়েকবারের চেষ্টায় ফু সেই ছোট গর্তটি ধরে ঝুলে পড়লো এবং সেখানে ভর দিয়ে এক লাফে গর্তের ওপরে উঠে এল।
সব ব্যাঙ গুলো অবাক হয়ে তাকে বাহবা দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল যে এই গালি আর কটু কথা কি করে তাকে আরও উৎসাহিত করল?
ফু অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল সে তো ভেবেছে সবাই তাকে উৎসাহ দিচ্ছে। সবার উৎসাহেই তো তার মনোবল বেড়ে গিয়েছিল, আর তাই সে চেষ্টা করে গেছে। অন্য ব্যাঙেরা তাকে আর কিছু বলল না। ফু এর সেই গর্ত ধরে পু-ও পরে একটু চেষ্টা করে ওপরে উঠে আসল। তারপর ব্যাঙেরা যে যার যার পথে চলে গেল।
খাপছাড়া মনে হচ্ছে? আসল ঘটনা হল, ফু আসলে কানে একটু কম শুনত। তার এক হাতের মধ্যে দাঁড়িয়ে কথা না বললে সে ঠিকমত শুনতে পায় না। কাজেই তিন হাত গর্তের নিচে বসে অন্য ব্যাঙদের উত্তেজনা আর চেঁচামেচিতে তার মনে হচ্ছিল যে তারা তাকে উপরে ওঠার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে। আর সেই মনোবলের কারনেই সে দমে না গিয়ে চেষ্টা করে গেছে। তার মাঝে বিশ্বাস তৈরী হয়ে গিয়েছিল যে চেষ্টা করলে সে উঠতে পারবে। আর অন্যদিকে তার সঙ্গী পু যেহেতু অন্য ব্যাঙদের কথা ঠিকমতই শুনতে পেয়েছিল, তার মনের সব আশা নিভে গিয়েছিল, এবং বসে বসে মৃত্যুর অপেক্ষা করাটাই সে ভাল মনে করেছিল।
মোরাল অব দি স্টোরি?
এই গল্প থেকে আমরা আসলে দু’টি শিক্ষা পাই। প্রথম শিক্ষা হল, আপনার কথায় একজনের জীবন ভাল ও খারাপ, দুই দিকেই যেতে পারে। খারাপ অবস্থায় আপনি একজন মানুষকে সাহস দিয়ে উৎসাহিত করতে পারেন। আবার সেই অবস্থায় হতাশার কথা বলে তার মনবলকে ভেঙেও দিতে পারেন।
আর দ্বিতীয় শিক্ষা হল, যদি কেউ আপনাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে, অথবা আপনার খারাপ অবস্থায় হতাশামূলক ও নেতিবাচক কথা বলে আপনার মনোবল ও সাহসকে দুর্বল করতে চায়, আপনিও ফু-এর মত কানে কম শুনতে শুরু করুন। অন্যের বাজে কথা শোনার চেয়ে নিজের ভেতর থেকে আসা ভাল কথাগুলোর দিকে মনযোগ দিন। যেসব মানুষ সব সময়ে হতাশার কথা বলে, তারা নিজেরাই আসলে হতাশ ধরনের মানুষ। তারা সবকিছুর মধ্যে কিছু না কিছু নেগেটিভ খুঁজে বের করবেই। এদের সামনে কানে কম শোনার ভান করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এখন আপনি যদি এমন একজন মানুষ হন যে কিনা সব সময়ে অন্যদের উৎসাহ দেয়। কোনও পরিচিত মানুষ যখনই কোনও কঠিন কাজ করতে যায়, আপনি সব সময়েই বলেন যে “তুমি এটা করতে পারবে”, তখন সেই মানুষটি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। পৃথিবীতে খুব বেশি মানুষ নেই যারা নিজের ভেতর থেকে উৎসাহ আর আত্মবিশ্বাস খুঁজে পায়। তাদের সব সময়েই বাইরে থেকে কারও না কারও উৎসাহের প্রয়োজন পড়ে। আপনি নিজে যখন সেই মানুষের ভূমিকা নেবেন, তখন সবাই আপনাকে সম্মান করতে শুরু করবে।

CR007874CV02340
0 মন্তব্যসমূহ