ইয়োরোপের কোনো এক বিখ্যাত নগরের মোকদ্দমা উঠেছে এক চিত্রকরের বিরুদ্ধে। তিনি একটা এক্সিবিশনে একাধিক ছবির মধ্যে দিয়েছেন সম্পূর্ন নগ্না এক যুবতীর চিত্র। পুলিশ মোকদ্দমা করছে, নগ্না রমনীর চিত্র অশ্লীল, ভাল্‌গার, অব্‌সীন, পর্নগ্রাফিক। এ ধরনের ছবি সর্বজনসমক্ষে প্রদর্শন করা বে-আইনী, ক্রিমিনাল অফেন্স।
আদালতের এজলাসে বসেছেন গন্যমান্য বৃদ্ধ জজসাহেব, এবং জুরি হিসেবে ছ’জন সম্মানিত নাগরিক।
এক কোনে সেই নগ্না নারীর লাইফ সাইজ তৈলচিত্র। তাবৎ আদালত সেটি দেখতে পাচ্ছে। দুই পক্ষের উকিলদের তর্ক-বিতর্কের মাঝখানে হঠাৎ জজ-সাহেব চিত্রকরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনি বলছেন, এ ছবিটা অশ্লীল নয়। আচ্ছা, তাহলে অশ্লীল ছবি কাকে বলে সেটা কি এই আদালত তথা জুরি মহোদয়গনকে বুঝিয়ে বলতে পারেন?”
চিত্রকর ক্ষনমাত্র চিন্তা না করে উত্তর দিলেন, “নিশ্চয়ই পারি, হুজুর। তবে অনুগ্রহ করে আমাকে মিনিট দশেক সময় দিলে বাধিত হব।”
জজ-সাহেব বললেন, “তথাস্তু!”
চিত্রকর তার উকিলের কানে কানে ফিসফিস করে কি বললেন সেটা বাদ-বাকী আদালত শুনতে-পেল না।
সাত আট মিনিট যেতে না যেতেই উকিলের এক ছোকরা কর্মাচারী চিত্রকরের হাতে ছবি আঁকার একটা রঙের বাক্স তুলে দিল। চিত্রকর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর নগ্না রমনীর ছবির সামনে গিয়ে রঙতুলি দিয়ে এঁকে দিলেন নগ্নার একটি পায়ে সিল্কের একটি মোজা।
জজের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হুজুর, এ ছবিটা এখন হয়ে গেল অশ্লীল।“
তাবৎ আদালত থ। জজ বললেন, “সেটা কি প্রকারে হল? আপনি তো বরঞ্চ মোজাটি পরিয়ে দিয়ে নগ্নার দেহ কথঞ্চিৎ আবৃত করলেন।“
চিত্রকর সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “এই কথঞ্চিৎ আবৃত করাতেই দেওয়া হল অশ্লীলতার ইঙ্গিত। এতক্ষন মেয়েটি ছিল তার স্বাভাবিক, নৈসর্গিক, নেচারাল নগ্নতা নিয়ে — যে নগ্নতা দিয়ে সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক নরনারী পশুপক্ষিকে ইহ-সংসারে প্রেরন করেন। এবারে একটি মোজা পরে মেয়েটা আবরন দিয়ে অশ্লীল সাজেশন দিল ভার আবরনহীনতার প্রতি। এখন যদি কেউ এ ছবিটা দেখে মনে করে, কোনো গনিকা তার গ্রাহকের লম্পট কর্ম-প্রবৃত্তি উত্তেজিত করার জন্য একটিমাত্র মোজা পরেছে তবে আমি দর্শককে কনামাত্র দোষ দেব না।“

[সৈয়দ মুজতবা আলী'র কত না অশ্রুজল বইয়ের 'চুম্বন' রচনার অংশবিশেষ]
CR007559CU01005

full-width