মতামত: অপমানই কি শেষ কথা? ধর্মনগরের প্রসেনজিৎ সরকারের মৃত্যু আমাদের কী শেখায়!

GK Dutta
0

মতামত: ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫: ধর্মনগর, উত্তর ত্রিপুরা এই নামের সঙ্গে আজ যুক্ত হয়ে গেছে এক তরুণের মর্মান্তিক পরিণতি। ডেলিভারি বয় প্রসেনজিৎ সরকারের মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি আমাদের সমাজব্যবস্থার এক নির্মম প্রতিচ্ছবি। একটি সামান্য ডেলিভারি সংক্রান্ত বিরোধ কীভাবে একজন তরুণকে চূড়ান্ত হতাশার দিকে ঠেলে দিতে পারে, সেই প্রশ্নই আজ আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে।

একটি তুচ্ছ ঘটনা, ভয়াবহ পরিণতি
খবর অনুযায়ী, উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগরে ডেলিভারি বয় প্রসেনজিৎ সরকারের (২৩) মর্মান্তিক মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগ, ডেলিভারি সংক্রান্ত কথাকাটাকাটির জেরে প্রসেনজিৎ সরকারকে প্রকাশ্যে অপমান ও মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। সেই অপমানের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর তিনি নিখোঁজ হন এবং পরদিন তাঁর দেহ গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়। পরিবার দাবি করেছে, প্রকাশ্য অপমান ও মানসিক নির্যাতনের কারণেই প্রসেনজিৎ চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ঘটনার প্রতিবাদে ধর্মনগরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ও ন্যায়বিচারের দাবি উঠেছে। একজন পরিশ্রমী তরুণের সম্মানহানিকে যখন “ভাইরাল কনটেন্ট”-এ পরিণত করা হয়, তখন সমাজের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

অদৃশ্য শ্রমিকদের অদৃশ্য নিরাপত্তা
আজকের ডিজিটাল অর্থনীতিতে ডেলিভারি কর্মীরা অপরিহার্য। কিন্তু বাস্তবে তাঁদের জীবন ও মর্যাদার কোনো স্থায়ী নিরাপত্তা নেই। না আছে মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা, না আছে অপমান ও হেনস্থার বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা। প্রসেনজিতের ঘটনা আবারও প্রমাণ করল গিগ ওয়ার্কাররা কতটা অসহায়।

অপমান: নীরব কিন্তু মারাত্মক সহিংসতা
শারীরিক আঘাতের মতোই মানসিক আঘাতও প্রাণঘাতী হতে পারে। জনসমক্ষে অপমান, কটূক্তি এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও একজন মানুষের আত্মসম্মান ধ্বংস করে দিতে পারে। বিশেষত তরুণদের ক্ষেত্রে এই মানসিক চাপ অসহনীয় হয়ে ওঠে। প্রশ্ন হলো আমরা কি এই নীরব সহিংসতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি?

প্রতিবাদ ও প্রশ্ন
প্রসেনজিতের মৃত্যুর পর ধর্মনগরে যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, তা অবশ্যই ইতিবাচক। মানুষ বিচার চাইছে, দোষীদের শাস্তি দাবি করছে। কিন্তু শুধু প্রতিবাদ নয়, প্রয়োজন ধারাবাহিক সামাজিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ। ন্যায়বিচার যেন সময়ের সঙ্গে ধামাচাপা না পড়ে।

আইনের ভূমিকা ও আমাদের দায়িত্ব
এই ঘটনার নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত অত্যন্ত জরুরি। অপমান, হেনস্থা ও মানসিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা থামানো যাবে না। একই সঙ্গে আমাদের নাগরিক দায়িত্বও রয়েছে, অপমানের ভিডিও শেয়ার না করা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং সহানুভূতিশীল সমাজ গড়ে তোলা।

প্রসেনজিত যেন শুধু একটি নাম না হয়!
প্রসেনজিৎ সরকার আর ফিরে আসবে না। কিন্তু তার মৃত্যু যদি আমাদের সমাজকে আরও মানবিক, দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল করে তোলে, তবে সেটাই হবে তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা। আজ প্রশ্ন একটাই, আমরা কি এই ঘটনার পর বদলাব, নাকি আবারও ভুলে যাব?

প্রসেনজিৎ সরকার ডেলিভারি বয় মৃত্যুর বিস্তারিত ঘটনা

উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর এলাকায়, শনিবার সন্ধ্যায় (১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫), সাম্প্রতিক সময়ে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ২৩ বছর বয়সী ডেলিভারি কর্মী প্রসেনজিৎ সরকার নামে এক যুবক মর্মান্তিকভাবে মারা গেছেন। তিনি কুরিয়ার কোম্পানি ব্লু ডার্ট-এ ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ করে আসছিলেন।
প্রসেনজিৎ তার বাড়ি কামেশ্বর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন এবং সম্প্রতি এক অনলাইন ডেলিভারি নিয়ে একটি কাস্টমারের সঙ্গে মতান্তরে জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ অনুযায়ী, বিতর্কটি দ্রুত উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে পরিণত হয় এরপর সুস্মিতা ভট্টাচার্য আরও চারজনকে সঙ্গে নিয়ে (সংগীতা ভট্টাচার্য, সৌরভ ভট্টাচার্য, মেঘদীপ ভট্টাচার্য ও পিউ ধর) ব্লু ডার্ট অফিসে যান এবং সেখানে প্রসেনজিৎকে আক্রমণ ও প্রকাশ্যে অপমান করা হয় বলে অভিযোগ।তাদের হাতে এক ভিডিওও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে প্রসেনজিৎকে অপমানিত অবস্থায় দেখা যায়।
ঘটনার পর থেকে প্রসেনজিৎ বাড়ি ফেরেননি। তাঁর পরিবার ও স্থানীয়রা কয়েক ঘণ্টা খুঁজে বহু চেষ্টা করার পর গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ উদ্ধার করেন। ধারণা করা হচ্ছে অপমান ও মানসিক চাপের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন, যদিও এই দিকটি এখনও তদন্তাধীন।
প্রসেনজিৎ-এর পিতা নেপাল সরকার পুলিশে একটি অভিযোগ করেন এবং অভিযোগ করেন যে ওই ব্যক্তিরা তাঁকে মারধর ও অপমান করেছে, এবং এ কারণে তাঁর ছেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যেই একটি মামলা রুজু করেছে এবং অভিযুক্তদের খুঁজে বের করতে চেষ্টা করছে।
ঘটনায় স্থানীয়রা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং বিভিন্ন তরুণ ও জাগ্রত নাগরিক ন্যায়বিচার ও দ্রুত আইনি ব্যবস্থা দাবি করছে। প্রতিদিন ধর্মনগরের রাস্তায় প্রতিবাদ ও মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে জোরালোভাবে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন যে গভীর ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বিলম্ব না করেই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে সমাজে ডেলিভারি ও গিগ কর্মীদের নিরাপত্তা এবং মানসিক চাপের মতো ইস্যুগুলিও গুরুত্বসহকারে আলোচনায় এসেছে, কারণ অনলাইন সেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা প্রায়ই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও শেয়ারিং-এর ফলে যে মানসিক আঘাত সৃষ্টি হতে পারে, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
◉ ORMD09068YD06524
full-width


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!