বিবেকানন্দের হিন্দুইজম ও বর্তমান সময়ের হিন্দুত্বের মধ্যে পার্থক্যগুলি বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে এই দুটি ধারণার ভিত্তি এবং প্রভাব সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিবেকানন্দের হিন্দুইজম ছিল সার্বজনীন, উদার এবং মানবিকতায় ভরপুর, যেখানে বর্তমান সময়ের হিন্দুত্ব প্রায়ই রাজনীতি এবং সামাজিক বিভেদের সাথে জড়িত।

বিবেকানন্দের হিন্দুইজম:
স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দুইজমের মূল ভিত্তি ছিল মানবতার উপরে। তিনি বলতেন, “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।” তাঁর মতে, হিন্দু ধর্ম হলো সত্যের সন্ধান এবং এটি মানব জীবনের সমস্ত দিককে আলোকিত করে। তিনি "যত মত, তত পথ" এই কথায় বিশ্বাস করতেন, যা বলে যে প্রতিটি ধর্মই সত্যের দিকে যাত্রা করে এবং সব ধর্মের মধ্যে ঐক্য রয়েছে।
বিবেকানন্দের হিন্দুইজম মানে হল মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ। তিনি ধর্মের মাধ্যমে মানুষের উন্নতি এবং সমৃদ্ধির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। তাঁর প্রচারিত হিন্দুইজম ছিল সবার জন্য গ্রহণযোগ্য এবং কোনো প্রকার জাতিগত বা ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য নিয়ে ছিল না।

বর্তমান সময়ের হিন্দুত্ব:
বর্তমান সময়ের হিন্দুত্ব প্রায়ই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, যা বিবেকানন্দের দর্শনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বর্তমান হিন্দুত্ববাদ প্রায়ই জাতিগত পরিচিতি এবং ধর্মীয় আধিপত্যের উপর ভিত্তি করে বিভেদ সৃষ্টি করে। এটি প্রায়ই বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে এবং সমাজে অশান্তি ও সহিংসতা বৃদ্ধি করে।

বর্তমান সময়ের হিন্দুত্ববাদের কারণে সমাজে অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে:
১. ধর্মীয় বিভেদ: বর্তমান হিন্দুত্ববাদ প্রায়ই বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, যা সমাজে অশান্তি ও সহিংসতা বৃদ্ধি করে।

২. সাম্প্রদায়িক মনোভাব: হিন্দুত্ববাদের প্রভাবে সমাজে সাম্প্রদায়িক মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সহমর্মিতার বিপরীতে কাজ করে।

৩. রাজনৈতিক ব্যবহার: রাজনৈতিক দলগুলি হিন্দুত্ববাদকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে, যা প্রকৃত ধর্মীয় চেতনার বিপরীতে দাঁড়ায়।

এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য, বিবেকানন্দের ভাবনা আজকের সময়ে প্রাসঙ্গিক হতে পারে:
১. সর্বধর্ম সমন্বয়: বিবেকানন্দের "যত মত, তত পথ" ভাবনা গ্রহণ করে, সমাজে সকল ধর্মের প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।

২. মানবতার প্রচার: ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টির বদলে, মানবতা ও সার্বজনীনতাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

৩. শিক্ষার গুরুত্ব: বিবেকানন্দের মতে, শিক্ষা হল সমাজের উন্নতির মূলমন্ত্র। সঠিক শিক্ষা ও জ্ঞান সমাজে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সমন্বয় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে।

৪. সার্বজনীন প্রেম ও সহমর্মিতা: বিবেকানন্দ সর্বদা প্রেম ও সহমর্মিতার উপর জোর দিয়েছেন। এটি সমাজে শান্তি ও সমন্বয় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে।

বিবেকানন্দের ভাবনার প্রাসঙ্গিকতা:
সমাজের কল্যাণের জন্য বিবেকানন্দের এই ভাবনাগুলি আজকের সময়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সমাজে শান্তি, সমৃদ্ধি ও সমন্বয় ফিরিয়ে আনতে, আমরা তাঁর দর্শন ও আদর্শকে গ্রহণ করতে পারি।
বিবেকানন্দের হিন্দুইজমের মূল মন্ত্র ছিল মানবতা এবং সার্বজনীনতা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব রয়েছে এবং প্রত্যেককে সমান মর্যাদা ও সম্মান দিতে হবে। তাঁর এই চিন্তা-ভাবনা সমাজে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সমন্বয় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে।

বিবেকানন্দের হিন্দুইজমের ভাবনা জানার জন্য নিম্নলিখিত বইগুলি পড়তে পারেন:

এই বইগুলিতে বিবেকানন্দের ধর্মীয় দর্শন ও মানবতার প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি বইই আপনাকে নতুন প্রজ্ঞা ও অন্তর্দৃষ্টি দেবে।
ORM008699CX09127

full-width