গ্রেট ব্রিটেনের জাতীয় পতাকা (Union Jack) ১৯৪৭ সালের ১৫ই আষ্ট অবনমিত হলেও তার পরের কয়েক মাস ধরে চলেছিল দেশ গঠনের প্রক্রিয়া, যা আজও চলছে ৷ ডি-ডে-র পরও চলতে থাকে স্বাধীনতার সংগ্রাম ৷ বীরত্ব ও আত্মত্যাগের জন্য কিছু নাম খোদাই করা হয়ে গিয়েছিল ভারতের ইতিহাসে ৷ সে রকমই একজন জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) ২২ বছরের মকবুল শেরওয়ানি (Maqbool Sherwani)
১৯৪৭ সালের ২অক্টোবর লরি বোঝাই করে পাকিস্তানী আদিবাসীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রবেশ করে এবং বারমুল্লা এলাকায় লুণ্ঠনযজ্ঞ চালায়। তার কিছু সময়ের মধ্যেই কাশ্মীরের মাহারাজা হরি সিং শ্রীনগর ত্যাগ করেন৷ তিনি জম্মুতে ভারতীয় বাহিনীর কাছে গিয়ে সাহায্য চান৷ ২৬ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে অধিগ্রহণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মহারাজা৷ এরপর তড়িঘড়ি পাকিস্তানি উপজাতিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে ভারতীয় সেনাবাহিনী ৷ দীর্ঘ যুদ্ধের পর পাক উপজাতিরা পিছু হঠতে বাধ্য হয় ৷সেদিনের সেই আক্রমণটি এতটাই মারাত্মক ছিল যে, মোট ১৪,০০০ জনসংখ্যার মধ্যে বারমুল্লার মাত্র তিন হাজার নাগরিক বেঁচে ছিলেন।
পাকিস্তানের সেনাপতি এবং আক্রমণের মূল অপরাধী আকবর খান নিজেই তাঁর বই `কাশ্মীরের আক্রমণকারী` বইটিতে এ তথ্য দিয়েছেন।
সেদিন মকবুল শেরওয়ানি দেখেন যে আক্রমণকারীরা শহর জুড়ে লুষ্ঠনযজ্ঞ চালাচ্ছে। তখন তিনি জনগণকে সংগঠিত করতে এবং সম্মিলিতভাবে আক্রমণ প্রতিহত করতে মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন গ্রামে জনসভা করেছিলেন। পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিলো শ্রীনগর বিমানবন্দর দখল করা। কারণ তাৎক্ষণিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে জরুরী অস্ত্র সংগ্রহ ও ভারতীয় সেনা মোতায়েনের একমাত্র মাধ্যম ছিল শ্রীনগর বিমানবন্দর।
শ্রীনগর বিমানবন্দর দখল করা মানে ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চল থেকে শ্রীনগরকে বিচ্ছিন করে ফেলা। শেরওয়ানি অভিযানকারী পাকিস্তানী সেনাদের বিভ্রান্ত করেছিলেন এবং তাদেরকে ভুল পথে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিছু সময় পর সেনারা বুঝতে পারে তারা ভুল পথে যাচ্ছে। ভুল পরামর্শ দেয়ায় অভিযানকারীরা শাস্তি দিতে শেরওয়ানির খোঁজ করতে থাকে। শেরওয়ানি বারমুল্লা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দুরের শহর সুম্বলে ছিলেন। অভিযানকারী সৈনিকরা তাকে দেখতে পেয়ে অপহরণ করে এবং তাকে বারমুল্লায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। শেরওয়ানির আত্মত্যাগ ভারতীয় দেশপ্রেমিকদের জন্য উদাহরণ তৈরি করে।
রাগান্বিত অভিযানকারী সৈনিকরা শেরওয়ানি পেয়ে ১৪টি গুলি করে। শেরওয়ানির প্রতি তারা তাদের ঘৃণার তীব্র প্রতিফলন ঘটায়। আক্রমণকারীরা তার দেহটি বিকৃত করে এবং তার উপর গুলি চালানোর আগে তাকে ক্রুশে দেয়। কাঠের তক্তায় পেরেকযুক্ত দেহটি রেজিনা সিনেমার কাছে খান হোটেলের সামনে দুটি স্তম্ভের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। কেউ বাইরে আসতে সাহস না পাওয়ায় মরদেহটি বেশ কয়েকদিন ধরে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল।

আক্রমণকারীরা তার মাথায় একটি নোটও আটকে দিয়েছিলো যাতে লেখা ছিল - তিনি বিশ্বাসঘাতক, তাঁর শাস্তি মৃত্যু

শেরওয়ানির মৃত্যু বৃথা যায়নি। তার মৃত্যুর খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে যাওয়ার পরে কাশ্মীরীরা পুরো উপত্যাকা জুড়ে আরও তীব্রতার সাথে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলো। শেরওয়ানি আক্রমণকারী পাকিস্তানী সেনাদের হাত থেকে শ্রীনগর বিমানবন্দরটি রক্ষা করতে পেরেছিলেন। পরে শ্রীনগরে ভারতীয় সেনা মোতায়েন করা হয়।

দেশের সুরক্ষার জন্য মকবুল শেরওয়ানি আত্নত্যাগকে সম্মান জানাতে ২২ অক্টোবর শেরওয়ানি দিবস হিসেবে পালন করা হয় এবং বারামুলার শেরওয়ানি হল তাঁর নামেই রাখা হয়েছে ৷ সেখানে প্রতি বছর তাঁর আত্মত্যাগের কাহিনি তুলে ধরা হয় ৷





CR007677CV01508

full-width