প্রাণীজগতে প্রতিনিয়ত বিবর্তন হচ্ছে এই ব্যাপারটি প্রথম ডারউইন উপলব্ধি করেন নি। তৎকালীন অনেকের মধ্যেই ধারণাটি ছিল, তার মধ্যে ডারউইন অন্যতম। ১৮৫৯ সালে ডারউইন তার বই “দ্য অরিজিন অফ স্পেসিজ” প্রকাশ করেন। ৪৯০ পাতার এই বইয়ে ডারউইন উপযুক্ত প্রমান দিয়ে ব্যাখ্যা করেন বিবর্তন কী, বিবর্তন কেন হয়, প্রাণীজগতে বিবর্তনের ভূমিকা কী। এই লেখায় বিবর্তন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার উদ্দেশ্য আমার নেই।
বিবর্তন মানে পরিবর্তন। সময়ের সাথে সাথে জীবকূলের মাঝে পরিবর্তন আসে। প্রকৃতির বর্তমান অবস্থা , জীবাশ্মের রেকর্ড , জেনেটিক্স, আনবিক জীববিজ্ঞানের মত বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার গবেষণা থেকে এটি স্পষ্ট বোঝা গেছে। গাছ থেকে আপেল পড়ার মতোই বিবর্তন বাস্তব-এ নিয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই। সময়ের সাথে সাথে ত্রিপুরা রাজ্যের শিক্ষা ব্যাবস্থায়ও যে পরিবর্তন হচ্ছে তা নিয়ে আমার কোন দ্বি-মত নেই তবে একমতও হতে পারছিনা।
রাজ্যের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে এ রাজ্যের ৯৮ শতাংশ লোক শিক্ষিত। রাজ্যবাসি হিসেবে এটা আর দশ জনের মতো আমার জন্যেও নিত্যান্তই গর্ভের বিষয়, এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। যদিও বা কারো মনে কোন সন্দেহ থেকে থাকে তবে সেই সন্দেহ দুর করার জন্য কিছু সময়ের জন্য কোন ব্যাঙ্ক দাড়ালে অথবা রেগার কাজের মাষ্টার রোল হাতে নিলেই উনার সন্দেহ ১০০ শতাংশ দুর হয়ে যাবে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
এ রাজ্যের শিক্ষা ব্যাবস্থায়ও ক্রমাগত বিবর্তন ঘটে চলেছে, তার নিদর্শন হিসেবে দেখা যায় যে ক্রমাগত রাজ্যে ইংরাজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্টানের সংখ্যা বাড়ছে। আর রাজ্যের শিক্ষা ব্যাবস্থার পরিকাঠামোর যে ক্রমাগত পরিবর্তন ঘটে চলেছে, তার নিদর্শন সরকারি বিদ্যালয়ে গেলেই বোঝা যায়। তবে সব থেকে বেশী পরিবর্তন বা বিবর্তন ঘটেছে রাজ্যের পাঠ্যপুস্তকে তার নিদর্শন দশম শ্রেনীর ইতিহাস ও রাষ্ট্রতন্ত্র বই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, বইটির প্রথম পাতাতেই এদেশের প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলের পতাকা চিহ্নের ছবি দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক কারনেই মনে প্রশ্ন জাগে যে, আমাদের দেশের ইতিহাস ও রাষ্ট্রতন্ত্রের সাথে এইসকল রাজনৈতিক দল গুলির পতাকা চিহ্নের সংযোগটা কোথায় মেলে আর যদিওবা দু-একটি রাজনৈতিক দলের সংযোগ অল্পবিস্তর আছে সে বিষয়ে দ্বিমত নেই, তবে রাজনৈতিক দলের পতাকা চিহ্নের ছবি দেখিয়ে কি শেখানোর চেষ্টা হচ্ছে সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। ইতিহাস ও রাষ্ট্রতন্ত্র বইতো আগেও ছিল, কিন্তু কোনদিন কোন রাজনৈতিক দলের পতাকা চিহ্নের ছবি কোন বইয়ের পাতায় দেখিনি, তাহলে এখন কেন? নাকি এরাজ্যে ইতিহাস ও রাষ্ট্রতন্ত্রের নামে রাজনৈতিক অপশিক্ষা দেওয়ার অপ্রয়াস চলছে? এতদিন দেখে এসছি ছাত্র সংঘটনের নামে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে রাজনৈতিক দল গুলির জঘন্য রাজনৈতিক কার্যকলাপ, যা নিয়ে কিছু বলা বা লেখাটাও লজ্যার ব্যাপার। আমাদের নেতা-নেত্রীরা তো লজ্যার মাথা খেয়েছেন, কিন্তু আমাদের রাজ্যের বুদ্ধিজীবীদের অবস্থানও যে একই সেটা জানা ছিলনা। নাকি আমাদের বুদ্ধিজীবীদের দোয়াতের কালিও রাজনীতির রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে গেছে? আমরাতো প্রতিবাদের ভাষা প্রায় হারিয়ে ফেলেছি অনেকদিন হল, তবুও অভিবাবকদের কাছে আমার বিনম্র অনুরোধ, এই রাজনৈতিক অপশিক্ষা ও অপ্রয়াসের বিরুধ্যে সোচ্চার হয়ে উঠুন, নতুবা আমাদের আগামি প্রজন্ম আমাদেরকে কোনদিন ক্ষমা করবেনা।
আমি চার্লস ডারউইন এবং আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস স্বাধীনভাবে বিবর্তনের যে প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছিলেন তা থেকে কিছু উক্তি দিয়েই আমার এই লেখাটির ইতি টানতে চাইঃ
অস্তিত্বের নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চলার সময় যে প্রজাতির গুলোরমাঝে পরিবেশে টিকে থাকার জন্য অধিক উপযোগী বৈশিষ্ট্য আছে তারাই সর্বোচ্চ সংখ্যাক বংশধর রেখে যেতে পারে। আর যাদের মাঝে পরিবেশ উপযোগী বৈশিষ্ট্য কমতাদের বংশধরও কম হয়, আবার এক সময় তারা বিলুপ্তও হয়ে যেতে পারে। বিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এই প্রক্রিয়াটিকেই বলা হয় “প্রভেদক প্রজননগত সাফল্য”। সবকিছুইতো বলা হল, এবার আসুন একবার নিজেদের দিকে তাকাই।
full-width