“মানুষ” কি লোহার
কল যে ঠিক নিয়ম অনুসারে চলবে? মানুষের মনের এত বিচিত্র এবং বিস্তৃত কান্ড-কারখানা,
তার এতদিকে গতি এবং এত রকমের অধিকার যে, তাকে এদিকে-ওদিকে হেলতেই হবে। সেই তার
জীবনের লক্ষন, তার মনুষত্বের চিহ্ন, তার জড়ত্বের প্রতিবাদ। এই দ্বিধা, এই
দুর্বলতা যার নেই তার মন নিত্যান্ত সংকীর্ন, কঠিন এবং জীবন বিহীন।
যাকে আমরা
প্রবৃত্তি বলি এবং যার প্রতি আমরা সর্বদাই কঠু ভাষা প্রয়োগ করি, সেইতো আমাদের
জীবনের গতিশক্তি। সেই আমাদের নানা সুখ-দুঃখ, পাপ-পুন্যের মধ্য দিয়ে অনন্তের দিকে
বিকশিত করে তুলে। নদী যদি প্রতি পদক্ষেপে বলে, ‘কি সমুদ্র কোথায়’, এ যে
মরুভুমি, ঐ যে অরন্য, ঐ যে বালির ছড়া, আমাকে যে শক্তি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে, সে বুঝি
আমাকে ভুলিয়ে অন্য যায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে তার যে ভ্রম হয়, প্রবৃত্তির উপর
অবিশ্বাস করলে আমাদের ও কতকটা সেইরকম ভ্রম হয়। আমরাও প্রতিদিন বিচিত্র সংশয়ের মধ্য
দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছি। আমাদের শেষ আমরা দেখতে পাচ্ছিনে, কিন্তু যিনি আমাদের অনন্ত
জীবনের মধ্যে প্রবৃত্তি নামক প্রচন্ড গতিশক্তি দিয়েছেন, তিনিই জানেন তাঁর দ্বারা
আমাদের কি রকম চালনা করবেন।
আমাদের
সর্বদা এই একটি ভুল হয় যে, আমাদের প্রবৃত্তি আমাদের যেখানে নিয়ে এসেছে সেখানেই
ভুঝি রেখে চলে যাবে, আমরা তখন যানতে পারিনে সে আমাদের তার মধ্য থেকে টেনে তুলবে। নদীকে
যে শক্তি মরুভুমির মধ্যে নিয়ে আসে, সেই শক্তিই সমুদ্রের মধ্যে নিয়ে যায়। এই রকম
করেই আমরা চলছি। যার এই প্রবৃত্তি অর্থাৎ জীবনি শক্তির প্রাবল্য নেই, যার মনের রহস্যময়
বিচিত্র বিকাশ নেই, সে সুখি হতে পারে, সাধু হতে পারে এবং তার সেই সংকির্নতাকে লোকে
মনের জোর বলতে পারে, কিন্তু অনন্ত জীবনের পাথেয় তার বেশী নেই। তাই জীবনটাকে
পরিতাপের জলে ভাসিয়ে নাদিয়ে, হেঁসে উরিয়ে দেওয়া অনেক ভালো।
full-width
0 মন্তব্যসমূহ